ঢাকা ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওমিক্রন ভাইরাস কতটা ভয় ছড়ালো দুই সপ্তাহে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সপ্তাহ দুয়েকের সামান্য বেশি হলো। এখন পর্যন্ত এর বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা। যদিও বর্তমানে ওমিক্রন সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু দক্ষিণ আফ্রিকার তথ্য বলছে, এটি করোনার আগের ধরনগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তবে আশার কথা, ওমিক্রনে আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা একেবারেই কম।

ওমিক্রনের অনেক বিষয়ে এখনো অন্ধকারেই রয়েছেন গবেষকরা। যু্ক্তরাজ্যে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। কী করতে হবে তা নিয়ে নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।

তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, নতুন বছরে করোনার ‘নতুন কাল’ হয়তো আরও নিয়ন্ত্রণযোগ্য হবে। কিন্তু এটি এখনো পরিষ্কার নয়, ২০২১ সাল যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ২০২২ সাল সেখানে সফল হবে কি না। নতুন বছরে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ না দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তো?

প্রাথমিক গবেষণাগুলো বলছে, করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক। এমনকি এটি পূর্ণডোজ টিকা নেওয়া অথবা আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদেরও আক্রমণ করছে।

 

ওমিক্রন কীভাবে তৈরি হয়েছে, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় বয়স্ক জনসংখ্যার দেশগুলোতে আরও গুরুতর হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের মতো অঞ্চলগুলোতে ডেল্টার প্রকোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কি না, তাও অস্পষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল্টার হাত ধরে করোনা মহামারির যে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছিল, তাতে ওমিক্রনের অনাকাঙ্ক্ষিত উত্থানের কয়েক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত সংক্রমণের হার একেবারে সামান্য ছিল।

ওমিক্রন নিয়ে এখন পর্যন্ত কী জানা গেলো
কত দ্রুত ছড়াচ্ছে?
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র গৌতেং এলাকায় সংক্রমণের হার তিনের বেশি। এর মানে হলো, প্রতিটি আক্রান্ত লোক গড়ে আরও তিনজনকে সংক্রমিত করছেন। দেশটিতে নতুন রোগীর সংখ্যা প্রায় রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। সেখানে ওমিক্রন সংক্রমণের হার এরই মধ্যে করোনার আগের তিনটি ঢেউকে ছাড়িয়ে গেছে।

জাপানের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, করোনার নতুন এই ধরন ডেল্টার তুলনায় ৪ দশমিক ২ গুণ বেশি সংক্রামক। যুক্তরাজ্যও বলছে, ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ওমিক্রনই সবচেয়ে বেশি দাপট দেখানো ধরন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছে তারা। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন করোনাভাইরাস।

ওমিক্রন কতটা ভয়ংকর?
মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনে আক্রান্তদের ক্লান্তি ও মাথাব্যথাসহ আরও কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, যা ডেল্টার প্রভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গের তুলনায় অনেকটাই সহনশীল।

দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি বৃহত্তম বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছে, করোনার আগের ঢেউগুলোর তুলনায় ওমিক্রনে রোগীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হার অনেক কম। সেখানে অল্প কিছু লোক অক্সিজেন সাপোর্ট ও ভেন্টিলেটরে রয়েছেন এবং মৃত্যুর হার খুবই সামান্য বেড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে পাঁচ হাজারের মতো করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন, যা আগের দুটি ঢেউয়ের চূড়ার তুলনায় চারভাগের একভাগ মাত্র।

এটি কি শিশুদের বেশি আক্রান্ত করছে?
দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, আগের তুলনায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের করোনায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। তবে, তাদের বেশিরভাগই অল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ছিল এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা বলেছেন, তাদের শ্বাসযন্ত্রের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

 

টিকায় কি কাজ হয়?
এর উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই।

আফ্রিকা হেলথ রিসোর্স ইনস্টিটিউট সবার আগে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন শনাক্ত করে এবং এর সঙ্গে ফাইজারের টিকার একটি পরীক্ষা চালায়। টিকা নেওয়ার ফলে তৈরি অ্যান্টিবডিকে ওমিক্রন অনেকাংশে ফাঁকি দিতে পারলেও পুরোপুরি পারেনি। ফাইজারের নিজস্ব গবেষণায়ও একই ফলাফল দেখা গেছে।

যুক্তরাজ্য বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের টিকার দুই ডোজ উপসর্গযুক্ত ওমিক্রন সংক্রমণের বিরুদ্ধে ডেল্টার তুলনায় অনেক কম সুরক্ষা দেয়। তবে একটি বুস্টার ডোজ সেই সুরক্ষাকে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশে পৌঁছে দিতে পারে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, এনডিটিভি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ওমিক্রন ভাইরাস কতটা ভয় ছড়ালো দুই সপ্তাহে

আপডেট টাইম : ১০:৪৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সপ্তাহ দুয়েকের সামান্য বেশি হলো। এখন পর্যন্ত এর বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা। যদিও বর্তমানে ওমিক্রন সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু দক্ষিণ আফ্রিকার তথ্য বলছে, এটি করোনার আগের ধরনগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তবে আশার কথা, ওমিক্রনে আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা একেবারেই কম।

ওমিক্রনের অনেক বিষয়ে এখনো অন্ধকারেই রয়েছেন গবেষকরা। যু্ক্তরাজ্যে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। কী করতে হবে তা নিয়ে নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।

তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, নতুন বছরে করোনার ‘নতুন কাল’ হয়তো আরও নিয়ন্ত্রণযোগ্য হবে। কিন্তু এটি এখনো পরিষ্কার নয়, ২০২১ সাল যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ২০২২ সাল সেখানে সফল হবে কি না। নতুন বছরে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ না দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তো?

প্রাথমিক গবেষণাগুলো বলছে, করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক। এমনকি এটি পূর্ণডোজ টিকা নেওয়া অথবা আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদেরও আক্রমণ করছে।

 

ওমিক্রন কীভাবে তৈরি হয়েছে, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় বয়স্ক জনসংখ্যার দেশগুলোতে আরও গুরুতর হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের মতো অঞ্চলগুলোতে ডেল্টার প্রকোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কি না, তাও অস্পষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল্টার হাত ধরে করোনা মহামারির যে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছিল, তাতে ওমিক্রনের অনাকাঙ্ক্ষিত উত্থানের কয়েক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত সংক্রমণের হার একেবারে সামান্য ছিল।

ওমিক্রন নিয়ে এখন পর্যন্ত কী জানা গেলো
কত দ্রুত ছড়াচ্ছে?
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র গৌতেং এলাকায় সংক্রমণের হার তিনের বেশি। এর মানে হলো, প্রতিটি আক্রান্ত লোক গড়ে আরও তিনজনকে সংক্রমিত করছেন। দেশটিতে নতুন রোগীর সংখ্যা প্রায় রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। সেখানে ওমিক্রন সংক্রমণের হার এরই মধ্যে করোনার আগের তিনটি ঢেউকে ছাড়িয়ে গেছে।

জাপানের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, করোনার নতুন এই ধরন ডেল্টার তুলনায় ৪ দশমিক ২ গুণ বেশি সংক্রামক। যুক্তরাজ্যও বলছে, ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ওমিক্রনই সবচেয়ে বেশি দাপট দেখানো ধরন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছে তারা। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন করোনাভাইরাস।

ওমিক্রন কতটা ভয়ংকর?
মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনে আক্রান্তদের ক্লান্তি ও মাথাব্যথাসহ আরও কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, যা ডেল্টার প্রভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গের তুলনায় অনেকটাই সহনশীল।

দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি বৃহত্তম বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছে, করোনার আগের ঢেউগুলোর তুলনায় ওমিক্রনে রোগীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হার অনেক কম। সেখানে অল্প কিছু লোক অক্সিজেন সাপোর্ট ও ভেন্টিলেটরে রয়েছেন এবং মৃত্যুর হার খুবই সামান্য বেড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে পাঁচ হাজারের মতো করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন, যা আগের দুটি ঢেউয়ের চূড়ার তুলনায় চারভাগের একভাগ মাত্র।

এটি কি শিশুদের বেশি আক্রান্ত করছে?
দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, আগের তুলনায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের করোনায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। তবে, তাদের বেশিরভাগই অল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ছিল এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা বলেছেন, তাদের শ্বাসযন্ত্রের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

 

টিকায় কি কাজ হয়?
এর উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই।

আফ্রিকা হেলথ রিসোর্স ইনস্টিটিউট সবার আগে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন শনাক্ত করে এবং এর সঙ্গে ফাইজারের টিকার একটি পরীক্ষা চালায়। টিকা নেওয়ার ফলে তৈরি অ্যান্টিবডিকে ওমিক্রন অনেকাংশে ফাঁকি দিতে পারলেও পুরোপুরি পারেনি। ফাইজারের নিজস্ব গবেষণায়ও একই ফলাফল দেখা গেছে।

যুক্তরাজ্য বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের টিকার দুই ডোজ উপসর্গযুক্ত ওমিক্রন সংক্রমণের বিরুদ্ধে ডেল্টার তুলনায় অনেক কম সুরক্ষা দেয়। তবে একটি বুস্টার ডোজ সেই সুরক্ষাকে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশে পৌঁছে দিতে পারে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, এনডিটিভি